জেলা প্রতিনিধি মুন্সীগঞ্জঃ
যেমন বাধ্য হয়ে সূর্যের চারপাশে বছরে একবার ঘুরে আসে, তেমনি চাঁদও ঘোরে পৃথিবীর চারপাশে। এ জন্য সময় লাগে ২৭.৩ দিন। কিন্তু নতুন চাঁদ দেখা যায় গড়ে প্রায় ২৯.৫ দিন পর। কারণ, চাঁদ দেখার জন্য চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে অন্তত ১০.৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি হতে হয়। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। তো চাঁদের এই ঘূর্ণনের কারণে চান্দ্রমাস কখনো হয় ২৯ দিনে, আবার কখনো ৩০ দিনে। এভাবে ১২ মাস হয়। অর্থাৎ ১২ বার নতুন চাঁদ ওঠে। ঈদের ঠিক আগে এ রকম একটি নতুন চাঁদের অপেক্ষায় থাকি আমরা। যা–ই হোক, চান্দ্রমাসের হিসাব অনুসারে বছর হতে ৩৬৫ দিন লাগে না। লাগে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিন। ফলে সৌরবর্ষের সঙ্গে প্রায় ১০ বা ১১ দিনের পার্থক্য দেখা যায়। আরবি ক্যালেন্ডারে এই পার্থক্যটা আর পূরণ করা হয় না। এ কারণে প্রতিবছর ঈদ ১০ বা ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। যেমন গত বছর ঈদ হয়েছিল ২২ বা ২৩ এপ্রিল। এ বছর ঈদ হতে পারে ১০ বা ১১ এপ্রিল। অর্থাৎ ১১–১২ দিন এগিয়েছে। আগামী বছর হয়তো ১ এপ্রিল ঈদ হতে পারে।
যে দেশে আগে সূর্য উঠবে, সে দেশে দিন শুরু হবে আগে। কিন্তু রোজা বা ঈদ অনুষ্ঠিত হয় চান্দ্রবর্ষ অনুসারে। আমরা যে সৌদি আরব থেকে তিন ঘণ্টা এগিয়ে আছি, তা আসলে সৌরবর্ষের হিসাবে। কিন্তু চান্দ্রবর্ষের হিসাবে আমরা মোটেও সৌদি আরব বা পশ্চিমা দেশ থেকে এগিয়ে নেই। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর বুঝতে হলে আরও একটুখানি বিজ্ঞান বুঝতে হবে।
সূর্যোদয় হয় পূর্বে আর অস্ত যায় পশ্চিমে। সূর্য আমাদের দিকে আগে আসে বলে যেমন আমরা আগে সূর্য দেখি, ঠিক একইভাবে সৌদি আরব আগে চাঁদ দেখে। কারণ, চাঁদ প্রথমে দেখা যায় পশ্চিম দিক থেকে।
এই যে সৌদি আরবের সাথে তিন ঘণ্টা পার্থক্যের কথা বলছি, তা তো সূর্যের হিসাবে। চাঁদের হিসাবে এই পার্থক্যটা আসলে ২১ ঘণ্টার। ফলে ঈদ যেহেতু চান্দ্রবর্ষের হিসাবে হয়, তাই হিসাবটাও করতে হবে চান্দ্রবর্ষ ধরে। অর্থাৎ চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে পার্থক্য আসলে তিন ঘণ্টার নয়, ২১ ঘণ্টার।
এখন আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি। প্রশ্নটা হলো, সৌদি আরব বাংলাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত, তাই সে দেশে আগে চাঁদ ওঠে এবং আগে ঈদ হয়—এতক্ষণে তা বোঝা গেল।
কিন্তু যে দেশ বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত, যেমন জাপান কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় কেন বাংলাদেশের এক দিন আগে অর্থাৎ সৌদি আরব বা পশ্চিমা দেশের সঙ্গে মিলিয়ে ঈদ পালন করে? এর সম্ভাব্য দুটি কারণ আছে।
প্রথমটা হলো, বাংলাদেশের চেয়ে জাপানে সূর্যাস্ত হয় আগে। অর্থাৎ যখন বাংলাদেশে চাঁদ দেখার কথা, তখন সূর্যের আলো থাকে। ফলে আমরা চাঁদ দেখতে পারি না। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া কিংবা জাপানের মতো পূর্বের দেশগুলোতে তখন থাকে সন্ধ্যা। ফলে তারা ঠিকই চাঁদ দেখতে পারে। শুধু সূর্যের আলোর কারণেই আমরা চাঁদ দেখতে পারি না। পরের দিন চাঁদ আবার পশ্চিম থেকে ঘুরে আমাদের কাছে আসলে আমরা সেই চাঁদ দেখি। এ কারণে জাপান বা ইন্দোনেশিয়া আমাদের পূর্বে থেকেও এক দিন আগে পশ্চিমাদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে।
যখন বাংলাদেশে চাঁদ দেখার কথা, তখন সূর্যের আলো থাকে। ফলে আমরা চাঁদ দেখতে পারি না। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া কিংবা জাপানের মতো পূর্বের দেশগুলোতে তখন থাকে সন্ধ্যা। ফলে তারা ঠিকই চাঁদ দেখতে পারে।
আর দ্বিতীয় কারণটা হলো, খালি চোখে চাঁদ দেখতে হলে চাঁদ ও সূর্যের মধ্যবর্তী কোণ হতে হয় ১০.৫ ডিগ্রি। ফলে জাপানে যখন সূর্য ও চাঁদের মধ্যবর্তী কোণ ১০.৫ ডিগ্রি হয়, বাংলাদেশে তখন হয় না। এই কোণ হতে যে পরিমাণ পথ পাড়ি দিতে হয়, তাতে চাঁদের প্রায় ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টা লেগে যায়। তাই আমরা জাপানের চেয়ে পরে চাঁদ দেখি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেসব দেশ বাংলাদেশের চেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত, তারা আমাদের চেয়ে আগে ঈদ করে। আবার যারা পূর্বে অবস্থিত, তারাও। মাঝে থেকে বাংলাদেশ ঈদ পালন করে তাদের চেয়ে এক দিন পরে!
0 Comments